মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো

WhatsApp Channel Join Now

প্রশ্নঃ- মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।

উত্তরঃ- ভূমিকা:- ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার রীতি অনুসারে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের প্রকৃত শাসক ফলের মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নমের্ণ. ডি. পামারের ভাষায়, রাজ্যগুলিতে প্রকৃত শাসক মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য যার অবস্থান দেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুরূপ।

মুখ্যমন্ত্রীর যোগ্যতা, নিয়োগ ও কার্যবলি:-

কোন অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে গেলে তাকে রাজ্য বিধানসভার সদস্য হতে হয়। সংবিধানের ১৬৪ নং ধারায অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা ভোটের নেতা / নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যপালের দ্বারা নিয়োগ হয়। উল্লেখ যে যদি বিধানসভার দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে তখন রাজ্যপাল তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।।

সংবিধানের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়নি। এ বিষয়ে সঠিক ধারণা লাভের জন্য রাজ্যের রাজ্যপাল, মন্ত্রিসভা, বিধানসভা, নিজ দল ও জনগণের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক আলোচনা করা দরকার। নিম্নে সেগুলি আলোচনা করা হলো:-

১) রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সংযোগ:-

মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্য ও রাজ্য সরকারের মধ্যে মুখ্য যোগ সূত্রকারক ব্যক্তি। রাজ্যপাল তার স্বাবিবেচনা অনুযায়ী রাজ্যের ক্ষেত্রে এছাড়া শাসন কার্য পরিচালনার অন্য সমস্ত ক্ষেত্রে রাজ্য মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে থাকেন। রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাজ্য মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের রাজ্যপাল, নিয়োগ, অপসারণ, দপ্তর বন্টন, অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এক কথায় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য মন্ত্রিসভার সংযোগ স্থাপন করেন।

রাজ্য মন্ত্রিসভার নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী:-

মন্ত্রিসভার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘সমপর্যায় ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য’ (First Among Equais) বলা হয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার নেতা / নেত্রী এই কারণে তার শীর্ষে। মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগ থেকে দপ্তর বন্টন সবক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শেই রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী তার বিরাগ ভাজন ব্যক্তিকে অপসারণ করতে পারেন। মন্ত্রিসভার মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা তার দায়িত্ব। তিনি ক্যাবিনেটের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এক কথায় মুখ্যমন্ত্রী হলেন ক্যাবিনেটের তোরণের ভিত্তি প্রস্থার।

রাজ্য আইনসভার নেতা:-

রাজ্যের আইন সবার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাজ্য আইনসভার তিনি দু’রকম ভূমিকা পালন করেন।
A) সরকারের প্রধান হিসেবে।
B) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে।
তিনি বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দেন, সরকারি নীতি ব্যাখ্যা করেন। রাজ্য আইনসভার গুরুত্বপূর্ণ বিলের ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক স্থাপন:-

মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমেই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রাজ্যের আর্থিক পরিকল্পনার রূপদান করা। পাশাপাশি বন্যা খড়া মোকাবেলা করার জন্য অর্থের প্রয়োজন দেখা দিলে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা।

দলের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী:-

মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্য আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। এক্ষেত্রে তিনি আইন সভার ভেতরে এবং বাইরের শাসক দলের নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে তার দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য জননেতার ভূমিকা পালন করতে হয়।
যেমন:- ভাষণ দান, সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি।

জনগণের নেতা:-

রাজ্যের প্রকৃত শাসক প্রদান হলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি হলেন রাজ্যের জনগণের নেতা বা নেত্রী। রাজ্য সরকারের সাফল্য ও জনপ্রিয়তা মুখ্যমন্ত্রীর উপর নির্ভরশীল। জনসাধারণ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছ নির্ভরশীল থাকে। তার বক্তব্য কার্যকলাপ রাজ্যবাসীর মধ্যে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।