ক্ষমতা কাকে বলে ? ক্ষমতার মূল উপাদান গুলি আলোচনা করো

WhatsApp Channel Join Now

প্রশ্নঃ- ক্ষমতা কাকে বলে ? ক্ষমতার মূল উপাদান গুলি আলোচনা করো।

অথবা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা:- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল ক্ষমতা বা শক্তি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র কি ভূমিকা নেবে তা প্রধানত ক্ষমতাবান শক্তির দ্বারা নির্ধারিত হয়।ক্ষমতা বা শক্তির উপাদান:-

ভৌগলিক উপাদান:-

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মর্গেন থাউয়ের মতে ভৌগলিক উপাদান হলো এমন এক স্থায়ী উপাদান যার উপরে কোন শক্তি নির্ভরশীল। ভৌগলিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে দেশের অবস্থান, আয়তন, ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু।

A) অবস্থান:-

অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান দেশের সামরিক ও নিরাপত্তা জনিত ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।

B) আয়তন:-

ভূ ভাগের বিশাল আয়তন সামরিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থার সৃষ্টি করে বলে মনে করা হয়।

C) ভূ-প্রকৃতি:-

আধুনিক বিশ্বের জাতীয় শক্তির ক্ষেত্রে ভূ প্রকৃতির অবদান রয়েছে। যথাযথ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। পাহাড়, পর্বত, মরুভূমি, অরণ্য, সমুদ্র ও নদনদীর বাহুল্য যে কোন দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ তথা রাজনৈতিক ঐক্য এমনকি জাতীয় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সৃষ্টি করে।

D) জলবায়ু:-

জলবায়ু মানুষের কর্ম ক্ষমতা নির্ধারণ করে ও জাতীয় শক্তিকে প্রভাবিত করে থাকে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের মতে, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল কোন দেশের বৃহৎ শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশের পথে সহায়ক।

২) জনসংখ্যা:-

জনসংখ্যা বা মানবসম্পদ জাতীয় শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিরক্ষা অর্থনৈতিক বিকাশ এবং দেশ সংগঠনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী দক্ষ ও শিক্ষিত জনগণের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। অনেকের মতে অর্থনীতিক সম্পদের ব্যবহার ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য জনসংখ্যা যেমন প্রয়োজন তেমনি অতিরিক্ত জনস্ফীতি ও আবার অর্থনৈতিক অবনমন ডেকে থাকে।

৩) প্রাকৃতিক সম্পদ:-

আধুনিক বিশ্বে কোন দেশকে শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাতে গেলে তাকে অতি অবশ্যই প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ হতে হবে। আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চমানের ইস্পাত, খনিজ তেল, ইউরোনিয়ম, প্লুটোনিয়াম প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে কৃষক দ্রব্য খাদ্যশস্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। খাদ্য শস্যের শর্বরতা অর্জন কোন দেশের জাতীয় শক্তি বা সামর্থ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। প্রযুক্তি বিদ্যার বিকাশ শিল্পোন্নয়ন ইত্যাদির জন্য প্রকৃতিক সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

৪) অর্থনৈতিক সামর্থ্য:-

অর্থনৈতিক সামর্থ্য ছাড়া কোন দেশের পক্ষে জাতীয় শক্তি সমৃদ্ধি হওয়ার সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ্বের শিল্প উন্নত দেশগুলি এই কারণে জাতীয় শক্তির দিক থেকে সুবিধা জনক অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের ভাব অনুকূল না হলে তার পক্ষে মানবসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার সম্ভব নয়। তাছাড়া এই সম্পদ কে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তি বিদ্যার জ্ঞান এই প্রযুক্তি বিদ্যাগত জনের অভাবনীয় উন্নতি ঘটিয়ে জাপান বর্তমানে নিজেকে ইকোনমিক সুপার পাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।

৫) সামরিক ব্যবস্থা:-

একটি দেশের সামরিক শক্তি কেবলমাত্র গতানুগতিক স্থল বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনীর উপর নির্ভর করে না। পারমাণবিক বোমা অন্তর দেশীয় ক্ষেপণাস্ত ও অন্যান্য শক্তিশালী মরণাস্তের উপর বর্তমানে একটি দেশের সামরিক শক্তি নির্ভর করে। আধুনিক বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সজ্জিত না হলে কোন দেশের পক্ষে বৃহৎ শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব নয়।

৬) সরকারের প্রকৃতি:-

সরকারের প্রকৃতির উপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা নির্ভর করে। অবশ্য সরকারি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি আমলা বর্গের সক্রিয়তার কথা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

৭) জাতীয় চরিত্র বা জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও আত্মবিশ্বাস:-

কোন দেশের শক্তি অর্জনের বিষয়টি সেই দেশের জনগণের জাতীয় চরিত্র বা জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও আত্মবিশ্বাসী উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। জাতীয় চরিত্র বা জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও আত্মবিশ্বাসের ফলে জাতীয় শক্তির তারতম্য ঘটে বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। প্রবল দেশপ্রেম ও সুদর মনোবলের জন্যই ভিয়েতনামের মত দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তিধর দেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে লড়াই চালাতে পেরেছিল।

৮) কূটনীতি:-

অনেকে কূটনীতিকে জাতীয় শক্তির মস্তিষ্ক রূপে বর্ণনা করেছেন। মর্গেন থাউয়ের মতে যেসব উপাদান নিয়ে কোন জাতীয় শক্তি গড়ে ওঠে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কূটনীতি। কূটনীতির মধ্যেই একটি দেশ তার জাতীয় শক্তির অন্যান্য উপাদান কে সার্থকভাবে প্রয়োগ করতে পারে।

উপসংহার:-

যেকোনো একটি বা কয়েকটি উপাদানের বিশ্লেষণ থেকে শক্তি বা ক্ষমতার সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যায় না। জাতীয় শক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি উপাদানের কার্যকারী ভূমিকা রয়েছে। অবশ্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বশক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলিরও পরিবর্তন ঘটে চলেছে।