গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ নীতির অর্থ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো

WhatsApp Channel Join Now

প্রশ্নঃ- গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ নীতির অর্থ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:-

সত্যাগ্রহ:- গান্ধীজীর তথ্যের একটি অন্যতম প্রধান নীতি হলো সত্যাগ্রহ। পণ্ডিতদের মতে, সত্য প্রতিষ্ঠান যীশুর আত্মত্যাগ, গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও প্রেমের বাণী এবং রস্কিন, থেরো ও টলস্টযের এর চিন্তাধারা প্রভাবিত হয়ে গান্ধীজি সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটি গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি গীতা ও উপনিষদ সম্বন্ধে তার গভীর অধ্যায়ন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নিপ্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তার সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাকে সমৃদ্ধ করেছিল।

অর্থ:-

সত্যাগ্রহ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো সত্যের প্রতি আগ্রহ। সত্যাগ্রহ হলো এক সুসংহত জীবন দর্শন সত্য প্রতিষ্ঠার নৈতিক সংগ্রামের এক নিরস্ত্ব প্রতিরোধ। গান্ধীজি মনে করেন, চট্টগ্রাম হল গিয়ে কোন ব্যক্তির এক সহজাত জন্মগত অধিকার। এ শুধু পবিত্র অধিকার নয় পবিত্র কর্তব্যও।

প্রকৃতি:-

গান্ধীজী তাঁর রচনায় সত্যাগ্রহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যেসব দিকের কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:-

১) আত্মিক শক্তির সংগ্রাম:-

গান্ধীজীর মতে, সত্যাগ্রহ হলো আপনি শক্তির এক সংগ্রাম। কি হলো এমন এক ধরনের সংগ্রাম যেখানে প্রচলিত অর্থের জয় পরাজয় বলে কিছু নেই। সত্য যে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো এই সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য।

২) নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয় সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়কে অস্বীকার:-

গান্ধীজীর অভিমত অনুসারী সত্যাগ্রহ নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয়, কি হলো? সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়কে অস্বীকার করার সংগ্রাম। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ হল দুর্বল ভীরু ও কাপুরুষের অস্ত্র, সত্যাগ্রহ তা নয়। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিপক্ষের প্রতি ঘৃণা থাকতে পারে তবে সত্যাগ্রহের এই সব স্থান নেই।

৩) জন্মগত অধিকার:-

গান্ধীজি মনে করতেন, সপ্তাহ হল মানুষের সহজ আর জন্মগত অধিকার, (Satyagraha is an inherent birth night of a person) এ হলো প্রতিটি মানুষের কাছেই জন্মগতভাবে এক অর্জিত অধিকার।

৪) সত্যাগ্রহ ও প্রতিপক্ষ:-

প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘাতের পথে গিয়ে তার ওপর চরম আঘাত হানা সত্যাগ্রহের কাজ নয়। সেখানে অহিংসা, প্রেম ও ভালোবাসার সাহায্য প্রতিপক্ষের হৃদয় জয় করাই হলো মূল উদ্দেশ্য।

৫) একটি সৃজনশীল পদ্ধতি:-

গান্ধীজি মনে করতেন, সত্যাগ্রহ হলো এক সৃজনশীল পদ্ধতি। আপার দৃষ্টিতে সত্তা গ্রহের কিছু দাবি আদায় করার লক্ষ্য থাকলেও মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিপক্ষের মনে শুভ বোধ জাগ্রত করে তার হৃদয়কে পরিবর্তন ঘটানো। এই কারণে সত্যাগ্রহকে একটি সৃজনশীল পদ্ধতি বল অভিহিত করা হয়েছে।

৬) সত্যাগ্রহ দুর্বল এর জন্ম নয়:-

গান্ধীজীর অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন। সত্যাগ্রহে দুর্বলতা, ভীরুতা ও কাপুরুষতার কোন জায়গা নেই।

৭) সত্যাগ্রহ ও অহিংসা:-

সত্যাগ্রহের সঙ্গে অহিংসার একটি অবিচ্ছেদ সম্পর্ক রয়েছে। সত্যাগ্রহী কখনো হিংসেকে প্রশ্রয় দেবে না। অহিংসার পূজারী।

৮) সত্যাগ্রহের বিধি:-

গান্ধীজী তাঁর রচনায় সত্যাগ্রহের বিধি সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন ভয় কাকে বলে সত্যাগ্রহী জানেনা।

৯) সত্যাগ্রহের কলাকৌশল:-

গান্ধীজি সত্যাগ্রহের কলা কৌশলের কথাও লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৌশল হলো:-

i) বিবেকের বিরুদ্ধে কোন কিছু না করা।
ii) প্র লোভের ফাঁদে পা না দেওয়া।
iii) বিজয়ীর আধিপত্যের মাথা নত না করা।
iv) সত্যাগ্রহের উজ্জ্বলতার কোন জায়গা নেই।
v) সত্যগ্রহের জন্য চরম ত্যাগ এমন কি মৃত্যু বরণ করতে প্রস্তুত থাকা।

সত্য গ্রহের চরিত্র:-

গান্ধীজী বলেছেন, স্বত্তর গ্রহের চরিত্র হলো সত্যাগ্রহের সৌন্দর্য, এটা আপনা আপনি আগে এর সন্ধান করতে হয় না। নিরন্তর সত্য সাধন ও সত্য উপনিত হওয়ার দিঢ় সিদ্ধান্তের নামেই সত্যাগ্রহ।

মূল্যায়ন:-

গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ তথ্য কে সমালোচনা করা অধিক মাত্রায় আধ্যাত্মিক ভাষাভাধি বা আশাবাদী বলে রায় দিয়েছেন। এসব বিরূপ আলোচনা করতে বলা যায় গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ তত্ত্বের ইতিবাচক দিকগুলিকে কোনভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার সত্যাগ্রহ তথ্যের প্রয়োগ সন্ধান দিয়েছিল এক নতুন পথের শুরু ভারতে নয় সারা পৃথিবীতে গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ দর্শনের মূল অপরিসীম। বর্তমানে এক বিংশ শতাব্দীর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিকে ভাবলেই দেখা যায় শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি আদায়ের সত্যাগ্রহ আজও সমানভাবে সক্রিয়।