
প্রশ্নঃ- চীনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণগুলি বিশ্লেষণ করো । এর প্রভাব ও গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর চীনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের এক বিশিষ্ট আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।এই আন্দোলনে প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল সাম্রাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হলে জাপান চীনের উপর অগ্রসর চালায়। এই যুদ্ধে চীন মিত্র পক্ষের যোগ দিলেও যুদ্ধের পর প্যারিসের শান্তি সম্মেলন বিজয়ী মিত্র শক্তি বর্গ জাপানের হাতে চীনের শানটুং প্রদেশে তুলে দেয়। যার ফলে চিনা ছাত্ররা ক্রুদ্ধ হয়। এই বিদেশী আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীনের এক ঐতিহাসিক আন্দোলন হয় যাও 1919 খ্রিস্টাব্দে ৪ ঠা মে আন্দোলন নামে পরিচিত
আন্দোলনের কারণ:-
১) চীনের অভ্যন্তরীণ অগ্নিগর্ভ অবস্থায়:-
চীনের অভ্যন্তরীণ অগ্নিগর্ভ অবস্থায় ৪ ঠা মে আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে কাজ করেছিল। উত্তর ও দক্ষিণ চীনের বিরোধ চীনকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেয়। চিনির জনসাধারণ সমর নায়কদের স্বার্থপরতা দেখে আরেকবারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। কি অবস্থায় তাদের বিক্ষাও বিদ্রোহকে একমাত্র পথ হিসেবে স্থির করে।
2) ইউয়ান সি কাই নিঃশংসতা:-
চীনের ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর সান ইয়াত সেন দক্ষিণ চীনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি কে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ১৪ই ফেব্রুয়ারি সমর নায়ক ইউয়ান সি কাই এর হাতে উত্তর ও দক্ষিণ চীনের রাষ্ট্রপতি পদ সমর্পণ করে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করেন। কিন্তু ইউয়ান সি কাই ঐক্যবদ্ধ চীনের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর চীনে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা করেন। তিনি বিদেশি শক্তি গুলিকে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে ঋণ লাভের চেষ্টা করেন।
3) কুয়ো মিন তাং নিষিদ্ধ:–
চীনের কুয়ো মিন তাং দলের নেতা সুং চিয়াও জেনকে ইউনিয়ন সি কাই নিহত করেন যা জনগণকে ক্রুদ্ধ করে তোলে। সান ইয়াদ সেন ঐক্যবদ্ধ চীন গঠনের জন্য স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে ও তার এই মহান উদ্দেশ্য বিফল হলে তিনি 1913 খ্রিস্টাব্দে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ ডাক দেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ইউয়ান- সি – কাই এর বাহিনী বিপ্লবী দখল করেন। এবং কুয়োমিন তাং দলকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়। যার ফলে জনগণকে ক্রুদ্ধ করে তোলে।
8) জাপানের একুইশ দফা দাবি:-
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে জাপানের মন্ত্রী হিয়কি – একি চীনা রাষ্ট্রপতি ইউয়ান – সি – কাইকে ২১ দফা দাবি পেশ করেন। এই দাবি পূরণের জন্য চীনকে ৪৮ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়। উল্লেখ্য এই দাবি গুলি অন্যতম ছিল মানচু রিয়া, শানটুং প্রভৃতি অঞ্চলে জাপান অতিরিক্ত স্থাপন করে। কোন স্বাধীন দেশের পক্ষে এরূপ দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ইয়ান – সি – কাই জাপানের এই দাবিগুলি মেনে নেন এবং জাপানিরা দিনটিকে অপমান দিবস হিসেবে দীক্ষা জানায়। পাশাপাশি জাপানি পণ্যের বয়কট শুরু করেন।
5) ইউয়ান সি কাই এর গোপন চুক্তি:-
চিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ইউয়ান সি কাই এর ইচ্ছে ছিল সম্রাট পদ লাভ। তিনি তার ব্যক্তি স্বার্থকে বাস্তবে রূপায়ন করতে জাপানের সঙ্গে এক গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। জাপানের আদেশ অনুযায়ী জাপানের সমস্ত বয়কট আন্দোলনকে নিষেধ করে দেন। এইসব ঘটনার কারণে চীনা বাসীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
6) প্রত্যক্ষ কারণ:-
চীনের আশা ছিল যে মিত্র পক্ষের যুদ্ধ জয়লাভ করলে বিদেশিদের কাজ থেকে চীন তারা রাজবংশগুলি ফেরত পাবে এবং সকল অসম চুক্তি গুলি বাতিল হয়ে যাবে। বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর 1919 খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে শান্তি সম্মেলন শুরু হলে চীনা প্রতিনিধিগণ জাপানে ২১ দফা দাবি সহ সমস্ত চুক্তি বাতিল করার দাবি জানায়। কিন্তু ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ সেই ব্যাপারে কর্ণপাত করেনি। তারা জানায় চীনের দাবিগুলি ‘আলোচনা বাহিরভূত বিষয়’। এই অবস্থায় চীনের প্রতিনিধিরা অপমানিত হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসে। এমন অবস্থায় পিংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক চেনতু – সিউ এর ডাকে হাজার হাজার ছাত্র জাতীয়তাবাদীর উদ্ভব হয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ ঠা মের আন্দোলনের সূত্রপাত করে।
৪ ঠা মেয়ের আন্দোলনের গুরুত্ব:-
পিংকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে চীনে যেয়ে সংস্কৃতির নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল তারেই ফলশ্রুতি ছিল ৪ টা নির আন্দোলন। চাও সে সুঙ্গ মনে করেন যে কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা ও গভীরতার বিচারে ৪ ঠা মের আন্দোলন ছিল চীনের ইতিহাসে এক নজর বিহীন ঘটনা। চীনের রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যেমন-
১) দেশাত্মবোধক ও আধুনিকতার উদ্ভব:-
৪ ঠা মে আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই চীনে আধুনিকতা দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের সূচনা হয়। প্রথম পূর্বে দেশপ্রেম ও জাতীয়তা বোধের উদ্ভব ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীরা ছিল এই আন্দোলনের চালিকাশক্তি।
২) সরকারি নীতিশিকার:-
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে চীন সরকার নীতি শিকারে বাধ্য হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার বাধ্য হয়ে ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দেয় ও ভাষায় সন্ধিপত্রের স্বাক্ষর করবে না বলে ঘোষণা করে ২৮ শে জুন ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে।
3)কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা:-
এই আন্দোলনের ফলেই চীনে কুয়োমিনতাং ফলের পূর্ব গঠন হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে।
৪) ব্যাপকতা:-
চীনে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ছিল একটি আঞ্চলিক বিপ্লব, যা দক্ষিণ চীন এবং সন্নিহিত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু চৌঠা মে আন্দোলনের প্রভাব ছিল চীনের সর্বত্র এবং এর গণভিত্তিক ছিল ব্যাপক।
5)সাংস্কৃতিক অগ্রগতি:-
এই সময় চীনে বহু বইপত্র ও পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হলে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটে। চীনের পুরনো কনফুসিয় মতাদর্শ সমালোচিত হয় ও নতুন সাংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায়। চীনা ঐতিহাসিক হো – কোন – চি বলেন ‘ ৪ ঠা মের আন্দোলন নতুন বিপ্লব ঝড়ের জন্ম দেয় এবং চীনের বিপ্লবকে এক নতুন স্তরে পৌঁছে দেয়।’ ঐতিহাসিক।
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাসের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর – HS History All Question And Answer – আরো দেখুন
প্রশ্নঃ- উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন – লেনিনের তত্ত্বটি আলোচনা করো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে শেখ মুজিবর রহমানের অবদান আলোচনা করো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- জাদুঘরের সংজ্ঞা দাও। জাদুঘরের উদ্দেশ্য কার্যাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- পলাশী যুদ্ধের কারণ লেখো উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ও তার প্রতিক্রিয়া আলোচনা করো উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- পঞ্চাশের মন্বন্তরের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- নবজাগরণের চরিত্র বা প্রকৃতি আলোচনা করো উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- সার্ক গঠনের প্রেক্ষাপট উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- চিনের উপর আরোপিত বিভিন্ন অসাম চুক্তি গুলি বর্ণনা দাও উত্তর- Click Here
উচ্চমাধ্যমিক ইংরেজি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর – HS English All Question And Answer – আরো দেখুন
Bring out the futility of war? Or, discuss the anti war attitude of the poet? – Answer – Click Here
Briefly describe the conversion between the narrator and the girl ? Answer – Click Here
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর – HS Bengali All Question And Answer – আরো দেখুন
প্রশ্নঃ- “শিকার ” কবিতায় যে দুটি ভোরের কথা বলা হয়েছে তার বর্ণনা দাও উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- “আগুন জললো আবার”- কেন আগুন জলে ছিল ? ” আবার ” কথাটি যোগ হয়েছে কেন ? উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- “চোখের জলটা তাদের জন্য”- কাদের জন্য ? ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখো ? উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- ” হাতিরবেগের ” প্রথাটি কেমন ছিল ? এই প্রথার অবসান ঘটলো কিভাবে ? উত্তর- Click Here
উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমস্ত প্রশ্নের উত্তর – HS Political Science All Question And Answer – আরো দেখুন
প্রশ্নঃ- ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো Click Here
প্রশ্নঃ- মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সম্পর্কে আলোচনা করো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- উদারনীতিবাদ কাকে বলে ? উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য লেখো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- ক্ষমতা স্বতন্ত্রী করণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও । উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- ক্ষমতা কাকে বলে ? এর মূল উদাহরণ গুলি আলোচনা করো। উত্তর- Click Here
প্রশ্নঃ- ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো ? উত্তর- Click Here
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবিজ্ঞান সমস্ত প্রশ্নের উত্তর – HS Education All Question And Answer – আরো দেখুন
প্রশ্নঃ- অনুবর্তন কাকে বলে ? শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন এর গুরুত্ব লেখো? উত্তর- Click Here
উচ্চমাধ্যমিক দর্শন সমস্ত প্রশ্নের উত্তর – HS Philosophy All Question And Answer – আরো দেখুন