দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও

WhatsApp Channel Join Now

প্রশ্নঃ- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা

ভূমিকা:- আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনসভার গঠন এক কক্ষ বিশিষ্ট না দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে, তা নিয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। ল্যাস্কি মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিরোধিতা করে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি অবতারণা করেন। অন্যদিকে লট ব্রাইট, লেকি হ্যানরি মেই, প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার কঠোর সমালোচনা করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে জোরালো যুক্তি দিয়েছেন। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি গুলি হল:-

পক্ষে যুক্তি:-

১) সুনিশ্চিত আইন প্রণয়ন:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা সুনিশ্চিতভাবে আইন প্রণীত। আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হওয়ায় প্রতিটি বিলকে দুটি কক্ষে পুঙ্খানু পুঙ্খভাবে বিবেচনা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এতে বিলের ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়ে।

২) জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সমন্বয় সাধন:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা থাকলে নিম্নকক্ষ ও উৎসব কক্ষের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় এবং আঞ্চলিক স্বার্থের সার্থক সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়। এই কারণে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা কে যুক্তরাষ্ট্রের আবশ্যিক বলে মনে করা হয়।

৩) স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ:-

লর্ড একটন আইনি সবার দ্বিতীয় কক্ষকে ব্যক্তি স্বাধীনতার নিরাপত্তা পক্ষে প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন। আইন সবার দুটি পক্ষ থাকলে প্রথম কক্ষের স্বৈরাচার অতি সহজেই দ্বিতীয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৪) জনমতের সঠিক প্রতিফলন:-

অনেকের মতে, আইনসভার দুটি পক্ষ থাকলেও জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটে। এছাড়াও আইনসভার দুটি কক্ষের নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হওয়ার দরুন পরিবর্তনশীল জনমতের সুষ্ঠ প্রতিফলন আইনসভায় দেখা দেয়।

৫) জ্ঞানী গুণী মানুষের প্রতিনিধিত্ব:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় দেশের জ্ঞানী গুণীদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়। আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হলে উচ্চকক্ষের জ্ঞানী গুণীদের খুব সহজেই মনোনয়ন দেওয়া যায়।

৬) সংখ্যালঘু স্বার্থের সুরক্ষা:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা পরোক্ষ নির্বাচন ও মনোনয়ের ব্যবস্থা থাকায় সংখ্যালঘু স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।

৭) রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তার:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তারিত সহায়ক বলে অনেকেই মনে করেন। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নের সময় যেসব আলোচনা ও বিতর্ক হয় তা গণমাধ্যমে মারফত/কর্তৃক প্রচারিত হওয়ায় সাধারণ জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও শিক্ষার প্রসার ঘটে।

বিপক্ষে যুক্তি:-

১) ওশাসনতান্ত্রিক সাধন কাঠামো:-

শাসনতান্ত্রিক আদর্শ অনুযায়ী জনগণের ভোটে বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে আইনসভা গঠিত হয়। কিন্তু কোন কোন দেশের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা মনোনয়ন প্রথায় প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থা থাকায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দৃষ্টান্ত রূপে বৃটেনের উচ্চ কক্ষ লর্ড সভায় উত্তরাধিকারের সূত্রে লর্ডদের মনোনয়নের কথা বলা যেতে পারে।

২) অনাবশ্যক:-

আইনসভার দুটি কক্ষকে অনেকে অনাবশ্যক বলে মনে করেন। তাদের মধ্যে দুটি কক্ষ যদি একই রাজনৈতিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে তাহলে দ্বিতীয় কক্ষে অস্তিত্ব অনাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়।

৩) দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা সম্পন্ন:-

অনেকেই মনে করেন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় গৃহীত কার্যাবলী ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উঠলে এককভাবে কোন একটি কক্ষকে দায়ী করা যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দুটি কক্ষেই দেখা যায়।

৪) আইন প্রণয়নের অনুপযুক্ত:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নের দুটি কক্ষের ভূমিকা থাকায় জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আইন প্রণয়ন এখানে কোনভাবেই সম্ভব নয়। যে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়ন করা হয় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় তা নয়।

৫) ব্যয়বহুল্য:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার অস্তিত্বকে ব্যয়বহুল্য মনে করা হয়। তাদের মতে যেহেতু একটি কক্ষে প্রয়োজনীয় তাই সদস্যদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য অহেতুক অর্থের অপচয় ঘটে।

উপসংহার:-

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিরুদ্ধে সমালোচনার সত্বেও দেখা যায় যে বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার কাঠামো গৃহীত হয়েছে। বস্তুত, প্রথম পক্ষের প্রণীত আইন দ্বিতীয় কক্ষে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ থাকায় তা আরো পূর্ণতা লাভ করে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সংশোধনী কক্ষ রূপে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষের গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না।