বিশ্বায়নের প্রকৃতি আলোচনা করো

WhatsApp Channel Join Now

প্রশ্নঃ- বিশ্বায়নের প্রকৃতি আলোচনা করো

অথবা, বিশ্বায়নের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো।

ভূমিকা:- বিশ্বায়ন কোন নতুন ধারণা নয়। বিষয় নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া বহু পূর্বেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বজায় ছিল। বিষের প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে প্রয়োগের কাজ গত শতাব্দীতে বিশেষত ১৯৯০ এর পর শুরু হয়।রোলান্ড রবার্ট সন এর মতে বিশ্বায়ন এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা, (New World Order) প্রসারের ধারণার সঙ্গে জড়িত, পুঁজির অবাধ চলাচল বাজার অর্থনীতিক, উদারনীতি করনের ও বেসরকারিকরণ প্রভৃতি ধারণা সঙ্গে বিশ্বায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত।

বিশ্বায়নের সংজ্ঞা:-

বর্তমান বিশ্বের এক বহু আলোচিত শব্দ হলো গ্লোবালাইজেশন ( globalisation) যার বাংলা প্রতিশব্দ বিশ্বায়ন বা ভূবনায়ন। সামগ্রিকালের ব্যবহৃত ও পরিচিত হওয়ার সত্ত্বেও বিশ্বায়নের কোন সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। সহজ কথায় বিশ্বায়ন সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের বিস্তারের কথা বলে। অর্থনীতির প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্বায়নের মূল কথা হলো মুক্ত বা খোলা বাজার অর্থনীতি। বিশ্বায়ন চায় সমগ্র বিশ্বকে একটি বাজারে পরিণত করতে, যেখানে দেশের বাজার আর বিশ্বের বাজারের মধ্যে কোন বাধার প্রাচীর থাকবে না। কোন দেশ যে জিনিস ভালো উৎপাদন করবে, সীতা বিদেশে রপ্তান করবে এবং বিদেশী মুদ্রা রোজগার করবে। উল্টোদিকে যা সে উৎপাদন করতে পারবে না, সেই জিনিসগুলি সে বিদেশি থেকে আমদানি করবে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র পরস্পর পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। পণ্য পরিষেবা প্রযুক্তি, তথ্য ইত্যাদি বিষয়গুলি বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের মধ্যেই অবাধে আদান প্রদান করা যাবে। প্রকৃতিপক্ষে, যখন দেশে বাণিজ্যিক লেনদেন ও আদান প্রদানের উপর কৃত্রিম কোন বাধা নিষেধাজ্ঞা থাকে না যখন বিভিন্ন দেশের মধ্যে মূলধন শ্রম ইত্যাদি দেওয়া-নেওয়া বা বাজারে শক্তির স্বাধীন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার দ্বারা নির্ধারিত হয়, তখনই বিশ্বায়ন ঘটে। বিশ্বায়ন হলো বিশ্বজুড়ে প্রসারিত একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা রাষ্ট্র সংক্রান্ত সমস্ত সংকীর্ণ ধারণার অবসান ঘটে এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী আদান প্রদানের পথ সহজ হয়।

বিশ্বায়নের বিভিন্ন দিক:-

বিশ্বায়নের প্রকৃতিকে মূলত যে সমস্ত দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে সে গুলি হল:-

১) অর্থনৈতিক দিক:-

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মূল ভিত্তি হল তার অর্থনৈতিক প্রকৃতি। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার, বিশ্বব্যাংক এবং স্ট্যাট ( General agriment or trade and tariff)
GATT – চুক্তির পরবর্তী পর্যায়ে শোধিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার প্রধান দিকগুলির মধ্যে রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যের দ্রুতপ্রসার, লগ্নিপূজীর অবাধ আদান প্রদান, বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীদের মধ্যে অভি সমন্বয় ও নির্গম এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ ও অন্যান্য বিনিময়ের মাধ্যমে সঞ্চালন বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থার আধিপত্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রযুক্তি আদান-প্রদান, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ও তথ্য মাধ্যমিক বিস্তার প্রভৃতি।

২) রাজনৈতিক দিক:-

রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়ন জাতি রাষ্ট্রের সংকট সৃষ্টি করেছে বলে অনেকে মনে করেন, জাতি রাষ্ট্রগুলি সার্বিক চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার ধারণা বিশ্বায়নের যুগে বহু অংশে অচল হয়ে পড়েছে। বিশ্বায়ন জাতি রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতাকে খর্ব করে ‘ রাষ্ট্রকে একটি বাজার কেন্দ্রিক সংগঠনের পরিণত করেছে। অবশ্য জাতি রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিলোপ সাধন বা বিশ্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন কর্মকান্ড বিশ্বায়নে দেখা যায় না অধ্যাপক হোল্টন তার “globalization and the National state” শীর্ষক রচনায় জাতি ও রাষ্ট্রের উপর বিশ্বনে প্রভাব পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন- জাতি রাষ্ট্রগুলি যে পৃথিবীতে বাস করে তার পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বিশ্বায়ন হলো এই পরিবর্তনের একটি প্রধান উৎস। বিশ্বায়নের বিভিন্ন দিক জাতি রাষ্ট্র গুলির ভূমিকা ও পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন সাধন করেছে। এই ধরনের পরিবর্তন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে রাষ্ট্রের চরম সার্বভৌমত্বের চিরাচরিত ধারণার অবসান ঘটাতে পারে।

৩) সাংস্কৃতিক দিকঃ-

সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিশ্বায়নের প্রধান লক্ষ্য হলো সারা বিশ্বে এক সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা । সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন ইন্টারনেট সহ অত্যাধুনিক গণমাধ্যমের সহায়তায় এক পরিপুষ্ট ভোস সামগ্রী সাংস্কৃতির প্রসার শুরু করেছে, এর ফলে আঞ্চলিক ও জাতীয় সংস্কৃতিক স্বতন্ত্র খন্ন হতে বসেছে। বিশ্বায়ন বহুমুখী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমূহকে একছাঁচে ঢেলে সম জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। তাকে অনেকে মার্কিনী ম্যাচ ডোনাল্ড সংস্কৃতি বলে আখ্যা দিয়েছে। কিভাবে সাংস্কৃতিক বিস্ময়ন তৃতীয় বিশ্বের বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এক সংকটের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। আজ তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিতে যে সাংস্কৃতিক আক্রমণ চলেছে সেটি সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার এক প্রতিষ্ঠা। অবশ্য সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন বিশ্বের জাতি রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক মেল বন্টন ঘটাতে এবং স্বল্প ব্যয় উন্নত সাংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

৪) পরিবেশগত দিক:-

পরিবেশবিদদের মতে, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বিশ্বের পরিবেশগত ক্ষেত্রে এক সংকট সৃষ্টি করেছে। কর্পোরেট বিশ্বের আধিপত্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে শুধু যে বিনিষ্ট করে চলেছে তা নয়, তাকে পণ্যয়িত বলেছেন, পরিবেশবিদ বন্দনা শিবা তার ” globalisation and environment” শিষ্য ত্যাগ নিবন্ধে লিখেছেন” পৃথিবীর মূল সম্পদ গুলি হল স্থল, জল এবং পরিবেশগত বৈচিত্র্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে এই সার্বিক ও উপাদানগুলি পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই উপাদানগুলি উপজাতীয় কৃষক সম্প্রদায়ের অধিকার থেকে কেড়ে নিয়ে বিশ্বায়িত অপারেশন গুলির নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।