ক্ষমতা কাকে বলে ? এর মূল উদাহরণ গুলি আলোচনা করো।

WhatsApp Channel Join Now

প্রশ্নঃ- ক্ষমতা কাকে বলে ? এর মূল উদাহরণ গুলি আলোচনা করো।

উত্তর :-

ভূমিকা:-

ক্ষমতা বা শক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Power যা ফরাসি শব্দ Pouvir এবং লাতিন Potestas শব্দ থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ হল সম ক্ষমতা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো জাতীয় শক্তি। এক কথায় এর সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করতে পারে, একটি ছোট রাষ্ট্র সেই ভূমিকা পালন করতে পারে না। ভূমিকার এই উৎসই শক্তি বা ক্ষমতা। রাষ্ট্রের আসল হাতিয়ার হল ক্ষমতা। এই ক্ষমতার ধারাই কোন একটি দেশ আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের স্থান করে নেয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভিন্নমত প্রদান করেছেন ক্ষমতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে। হ্যান্স মরগেনথাউ বলেছেন- ” ক্ষমতা হলো অন্যের মন ও কার্যের উপর একজন মানুষের নিয়ন্ত্রণ”। অন্যদিকে জোসেফ ফ্রাঙ্কেল বলেছেন- ” অন্যের মন এবং কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে কাঙ্খিত ফল লাভের সামর্থ্যই হলো ক্ষমতা”।

ক্ষমতা বা শক্তির উপাদান:-

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম উদ্দেশ্য হল জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতা বিচার – বিশ্লেষণ। জাতীয় শক্তির বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিম্নে আলোচনা করা হলো।

ভৌগোলিক উপাদান:-

কোন একটি দেশের ভৌগোলিক উপাদান তার জাতীয় শক্তির অন্যতম নির্ধারক। জাতীয় শক্তির নির্ধারক হিসেবে ভৌগোলিক উপাদানের দিকটিকে প্রধান চারটি দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। যথা-

১) অবস্থান

২) আয়তন

৩) জলবায়ু ও

৪) ভূ প্রাকৃতি।

একটি দেশের বিশাল ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য দেশটির আর্থিক উন্নতি ঘটায়। আবার সামরিক দিক থেকেও বৃহৎ আয়তন দেশটিকে বাইরের শক্তি আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ভূ-প্রাকৃতি একটি দেশের জাতীয় শক্তিকে বৃদ্ধি করতে পারে।

জনসংখ্যা:-

জাতীয় শক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো জনসংখ্যা। তবে একটি দেশের জনসংখ্যা কে অবশ্যই সেই দেশের ভৌগোলিক সম্পদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হতে হবে। এবং জনগণকে অবশ্যই শিক্ষিত এবং উৎপাদনশীল হতে হবে। যাতে জাতীয় সম্পদ উৎপাদনে অসুবিধা না হয়। একটি দেশের সামরিক বাহিনী ওই দেশের জনগণ নিয়ে গঠিত হয়। তাই শক্তিশালী সেনাবাহিনীর গঠনের জন্য জনসংখ্যার প্রয়োজন আছে।

অর্থনীতি:-

বর্তমানে অর্থনীতি হলো একটি দেশের অন্যতম প্রধান মানদন্ড। শিল্পের প্রসার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুকূল অবস্থা ইত্যাদি হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সূচক। জনসাধারণের কল্যাণ সাধন ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার সম্পর্কযুক্ত। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শিল্প উন্নয়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মাপকাঠি।

সামরিক শক্তি:-

কোন দেশকে তখনই শক্তিশালী বলা হবে যখন তার সামরিক শক্তি অন্য দেশের অপেক্ষায় বেশি থাকবে। অর্থাৎ সামরিক শক্তি ছাড়া জাতীয় শক্তি হিসেবে একটি দেশের অন্য উপাদান গুলি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তবে এক্ষেত্রে শুধু সৈন্য সংখ্যা যথেষ্ট নয় আধুনিক অস্ত্র সস্ত্রের সজ্জিত হতে হবে । পাশাপাশি রণ-নীতি ও রণ কৌশল গত কারণে জল, স্থল ও বিমান বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন রাখতে হবে।

সরকার:-

জাতীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ এবং নির্ধারিত নীতির পক্ষে জনসমর্থন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সরকারের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে সুযোগ্য দূরদর্শী ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নেতাকে নির্বাচন করা প্রয়োজন। কারণ সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলেই জাতীয় শক্তি উন্নতি লাভ করেন।

কূটনীতি:-

কূটনীতির গুণগত দিকটি হলো জাতীয় ক্ষমতার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের সরকার যে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করেন তাকে সাফল্য মন্ডিত করার দায়িত্ব থাকে কূটনীতি বিদদের উপর। এই কূটনীতি বিদরা সরকারের দুর্বলতা পূরণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মরগেনথাউ কূটনীতিকে “জাতীয় শক্তির মস্তিষ্ক বলেছেন”।

উপসংহার:-

পরিশেষে বলা যেতে পারে যে কোন একটি দেশের জাতীয় শক্তি কতখানি তা বিচার করার সময় কেউ কেউ বিশেষ কোনো একটি উপাদানকে এরূপ শক্তির নির্ধারকের আসনে বসিয়ে অন্যান্য উপাদানের গুরুত্বকে কার্যত অস্বীকার করেন। এরূপ করা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়। যেসব উপাদান একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে অন্য সময়ের সেই সব উপাদানের ওই ভূমিকা নাও থাকতে পারে। জাতীয় শক্তির বিভিন্ন উপাদানের অবস্থিত যথেষ্ট নয়। একটি দেশের সরকার সেগুলির যথাযথ ব্যবস্থা করাতে পারছে কিনা তার উপর ওই দেশের জাতীয় শক্তি নির্ভর করে।