
প্রশ্ন:- মিলের অন্বয়ী ব্যতিরিকি পদ্ধতি আলোচনা করো। ( সংজ্ঞা, আঁকার দৃষ্টান্ত , দুটি সুবিধা ও দুটি অসুবিধা লেখো।
সংজ্ঞা:- অন্বয়ী ব্যতিরিকি পদ্ধতির সূত্রটি কে তর্কবিদ মিল (J.S Mill) নিযুক্তভাবে উপস্থাপিত করেছেন- ” বিচার্য ঘটনাটি যে সব দৃষ্টান্তে উপস্থিত আছে, তাদের ঠিক পূর্বগামী বা অনুগামী ঘটনাগুলির মধ্যে যদি আরও একটি ব্যাপার অবশ্যই উপস্থাপিত থাকে এবং বিচার্য ঘটনাটি যেসব দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে সেটি বিচার্য ঘটনার কার্য অথবা কারণ অথবা কারণের অপরিহার্য অংশ রূপে বিবেচিত।”
সুতরাং, পর্যবেক্ষণ লব্ধ দৃষ্টান্ত গুলিতে যে ঘটনার উপস্থিত থাকলে অন্য একটি ঘটনাও উপস্থিত থাকে এবং যে ঘটনাগুলি অনুপস্থিত থাকলে অন্য ঘটনাটিও অনুপস্থিত থাকে, সেই ঘটনা দুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ অনুমান করা যায়।
আকার:-
সদর্থক দৃষ্টান্ত |
পূর্ববতী ঘটনা (কারণ) | অনুবর্তী ঘটনার (কার্য |
ABC | abc |
APR | apn |
ARM | arm |
নঞর্থক দৃষ্টান্ত |
পূর্ববতী ঘটনার (কারণ) | পূর্ববতী ঘটনার (কার্য) |
ACD | bcd |
CDE | cde |
EFG | efg |
∴A হলো a এর কারণ
দৃষ্টান্ত:- বাস্তব উদাহরণ:-
সদর্থক দৃষ্টান্ত |
পূর্ববতী ঘটনার (কারণ) | অনুবর্তী ঘটনার (কার্য) |
মশার কামড় + জলে ভেজা | ম্যালেরিয়া রোগ |
মশার কামড় + ফুচকা খাওয়া | ম্যালেরিয়া রোগ |
মশার কামড় + দরিদ্রতা | ম্যালেরিয়া রোগ |
∴মশার কামড় হল ম্যালেরিয়ার কারণ
সুবিধা:-
অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতিটি মূলত পর্যবেক্ষণের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ লব্ধ কতগুলি সুবিধা দেখা যায়। অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতির এই সমস্ত সুবিধাগুলি হল:-
প্রথমত:-
অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতির প্রয়োগে ক্ষেত্রে অন্তত ব্যাপক বা বিস্তৃত। কারণ, এই পদ্ধতিতে অন্বয়ী পদ্ধতির দৈত্যপ্রয়োগ রূপে অবিহিত করা হয়। সুতরাং অনুব্যায়ী পদ্ধতির ন্যায় এই পদ্ধতিটি ও পর্যবেক্ষণ নির্ভর বলে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ভয়ের ক্ষেত্রে একে ব্যাপকভাবে নির্ণয় করা যায়। আবার যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যাতিরিকি পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব নয়, সেই সমস্ত ক্ষেত্রেও এই অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতিকে প্রয়োগ করা যায়।
দ্বিতীয়ত:-
অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা একদিকে যেমন কারণ থেকে কার্যে উপনীত হতে পারি, অপরদিকে তেমনি আবার কার্য থেকে কারণে যেতে পারি। এর ফলে কার্যকারণ সম্পর্কিত ধারণটিকে বিস্তৃত ও যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি সুনিশ্চিত না হলেও সিদ্ধান্তের সম্ভাবনাটি অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই পদ্ধতিটিকে তাই অন্যান্য পর্যবেক্ষণ লব্ধ পদ্ধতির এক উন্নতর রূপ হিসেবে স্বীকার করা হয়।
অসুবিধা:-
অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতিটি কখনো একটি নির্দোষ পদ্ধতিরূপে গণ্য নয়। পর্যবেক্ষণ লব্ধ পদ্ধতি রূপে গণ্য হওয়ায় এর মধ্যে কতগুলি পর্যবেক্ষণ মূলক দোষ দেখা যায়। অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতির এই সমস্ত দোষ বা অসুবিধা গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো।
অনিশ্চিত পদ্ধতি:-
পর্যবেক্ষণ লব্ধ পদ্ধতি বলে এই পদ্ধতির মধ্যে পর্যবেক্ষণের যে সমস্ত অসুবিধা আছে সেগুলি যথারীতি উপস্থিত। এই পদ্ধতিটিকে আমরা কখনোই সুনিশ্চিত বলে প্রমাণ করতে পারি না। এই পদ্ধতির মধ্যে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি তাই সব সময় সম্ভাব্য বলে বিবেচিত। কখনোই সুনিশ্চিত বলে গণ্য নয়।
পর্যবেক্ষণের অভাব:-
অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি অনেক সময় ব্যবহারিক দোষে দুষ্ট হতে পারে। কারণ এই পদ্ধতির ক্ষেত্রেও আলোচ্য ঘটনার কারণ বের করার সময় যে সমস্ত পূর্ববর্তী ঘটনার সমূহকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল বলে মনে হয় তার সবগুলোকেই যে পর্যবেক্ষণ করা গেছে এমন দাবি কখনোই করা যায় না। ফলে এক্ষেত্রে অপর্যবেক্ষণ মূলক দোষের সম্ভাবনাও থেকে যায়।
মূল্যায়ন:-
অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতি পর্যবেক্ষণমূলক। কিন্তু পর্যবেক্ষণের দ্বারা যতটুকু নিশ্চয়তা লাভ করা সম্ভব, তার সবটুক অন্বয়ী ব্যাতিরিকি পদ্ধতির প্রয়োগ করে পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি পর্যবেক্ষণের পরে ব্যতিরেকি পদ্ধতি বলা যেতে পারে। এরপরে নির্ভুলভাবে প্রযুক্ত বলে পরীক্ষালব্ধ সভ্যতায় আশ্বাস পর্যন্ত দিতে পারে।
উচ্চমাধ্যমিক দর্শন সমস্ত প্রশ্নের উত্তর – HS Philosophy All Question And Answer – আরো দেখুন
মিলের অন্বব্যায়ী পদ্ধতি আলোচনা করো । সংজ্ঞা আঁকা দৃষ্টান্তের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো। Click Here